প্রেমের সীমান্ত পেরিয়ে


প্রেমের সীমান্ত পেরিয়ে



ওয়িশি জন্ম থেকেই বিলাসিতার মাঝে বড় হয়েছে—ঝলমলে ঝাড়বাতি, দামি পোশাক, আর এমন এক জীবন যেখানে তার প্রতিটি চাওয়াই মুহূর্তে পূরণ হয়ে যেত। তার বাবা শহরের অন্যতম ধনী ব্যবসায়ী, যার একমাত্র লক্ষ্য ছিল তার মেয়েকে কোনো কষ্টের মুখোমুখি না হতে দেওয়া। কিন্তু ওয়িশির হৃদয় চেয়েছিল অন্য কিছু—অর্থ, প্রতিপত্তি নয়, বরং ভালোবাসা, স্বাধীনতা, আর একটা বাস্তব অনুভূতির স্বাদ।

অন্যদিকে, হিমুর জীবন ছিল ঠিক উল্টো। সে বড় হয়েছে শহরের সেই অংশে, যেখানে প্রতিদিন বেঁচে থাকাটাই ছিল সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তার মা মানুষের পোশাক সেলাই করতেন, কিন্তু সেই পোশাক পরা মানুষগুলোর চোখ কখনোই তাদের দিকে পড়ত না। হিমু মায়ের সঙ্গে কাজ করত, নানান ছোটখাটো কাজ করে সংসার চালানোর চেষ্টা করত। তার ছিল না ধনসম্পদ, কিন্তু স্বপ্ন দেখার সাহস আর কঠোর পরিশ্রমের অভ্যাস ছিল তার একমাত্র সম্বল।

এক সন্ধ্যায়, ওয়িশির গাড়ি শহরের বাইরের এক নির্জন রাস্তায় বিকল হয়ে যায়। বিরক্ত হয়ে সে গাড়ি থেকে নামে, কিন্তু চারদিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে, এখানে তার মতো মানুষের থাকার কথা নয়। ঠিক তখনই হিমুকে দেখতে পায় সে—একটা পুরনো সাইকেল ঠিক করছিল রাস্তার পাশে। তাদের চোখাচোখি হয়, মুহূর্তের জন্য সময় যেন থমকে যায়।

“আপনার সাহায্য লাগবে?” হিমু জিজ্ঞাসা করে, হাত মুছতে মুছতে।

ওয়িশি একটু দ্বিধা করে। সে কখনো এমন মানুষের সঙ্গে কথা বলেনি, কিন্তু হিমুর সরল হাসি আর আত্মবিশ্বাসী ভঙ্গি দেখে সে মাথা নাড়ে।

হিমু তার গাড়ি ঠিক করতে করতে গল্প করতে শুরু করে। ওয়িশি অবাক হয়ে দেখে, এই ছেলেটার চোখে এত স্বপ্ন, অথচ সে কিছুই চায় না, শুধু সুখী হতে চায়। সেই প্রথম ওয়িশি তার বিলাসবহুল জীবনের বাইরে আসল পৃথিবীর স্বাদ পায়।

এরপর থেকে তারা প্রায়ই দেখা করতে শুরু করে। লুকিয়ে, রাতের আকাশের নিচে, সমাজের চোখ এড়িয়ে। ওয়িশি তাকে বই পড়তে শেখায়, হিমু তাকে শেখায় কিভাবে ছোট ছোট জিনিসেই আনন্দ খুঁজে পাওয়া যায়।

কিন্তু ভালোবাসার পথ সহজ ছিল না।

ওয়িশির বাবা জানতে পারলেন। রেগে গিয়ে তিনি কড়া হুকুম দিলেন, “এই ছেলের সঙ্গে আর কখনো দেখা করবে না! সে তোমার যোগ্য নয়!”

ওয়িশির মন ভেঙে গেল, কিন্তু সে জানত, সত্যিকারের ভালোবাসার জন্য লড়াই করতেই হবে।

এক রাতে, সে পালিয়ে যায়, নদীর ধারে যেখানে তারা সবসময় দেখা করত, সেখানে গিয়ে দাঁড়ায়।

“চলো হিমু, আমরা একসঙ্গে থাকব,” ওয়িশি ফিসফিস করে বলে।

হিমু দ্বিধান্বিত হয়ে বলে, “কিন্তু আমি তোমাকে কিছুই দিতে পারব না, ওয়িশি।”

ওয়িশি তার হাত ধরে বলে, “তোমার স্বপ্ন আছে, তোমার ভালোবাসা আছে, আমার আর কিছুই চাই না।”

এভাবেই তারা একসঙ্গে পথচলা শুরু করে। একটা ছোট্ট ঘর, স্বপ্নের মতো জীবন, আর সত্যিকারের ভালোবাসায় ভরা দিন।

অনেক বছর পর, ওয়িশির বাবা আবার তাদের দেখে। কিন্তু এবার তাদের আর দারিদ্র্য নেই, তাদের আছে কঠোর পরিশ্রমের ফল, ভালোবাসার শক্তি। তিনি দেখলেন, তার মেয়ের চোখে যে সুখের আলো, তা কোনো টাকার বিনিময়েই পাওয়া সম্ভব নয়।

কারণ ভালোবাসা কখনো ধন-সম্পদের উপর নির্ভর করে না। ভালোবাসা হলো সেই অনুভূতি, যেখানে দু’জন মানুষ একে অপরকে সত্যিকারের জীবিত অনুভব করায়।

আর ওয়িশি আর হিমু ঠিক সেটাই খুঁজে পেয়েছিল।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন